December 31, 2025, 7:38 pm

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
সরকারি সেবা নিতে গিয়ে দেশের অতি ধনীরা তুলনামূলকভাবে বেশি ঘুষ দেন এবং ঘুষ প্রদানে শীর্ষে রয়েছে নোয়াখালী জেলা। একই সঙ্গে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সংস্থাটিতে সেবা নিতে গিয়ে ৬৩.২৯ শতাংশ নাগরিক দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় এ হার ৫৭.১৬ শতাংশ এবং পাসপোর্ট অফিসে ৫৭.৪৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস)’–এর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
চলতি বছরের ৬–২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। ৬৪ জেলার ১,৯২০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট থেকে ৪৫,৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ৮৪,৮০৭ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
জরিপ অনুযায়ী, গত ১২ মাসে ৩১.৬৭ শতাংশ নাগরিক সরকারি সেবা নিতে গিয়ে সরাসরি ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৮.৬২ শতাংশ এবং নারী ২২.৭১ শতাংশ। প্রায় ৯৮.৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা ঘুষ হিসেবে নগদ অর্থ দিয়েছেন।
জেলা ভিত্তিতে দেখা যায়, নোয়াখালীর ৫৭ শতাংশ মানুষ ঘুষ দেন, কুমিল্লায় এ হার ৫৩ শতাংশ এবং ফরিদপুরে ৫১ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে কম ঘুষ দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ—মাত্র ১০.৪৯ শতাংশ।
নিরাপত্তাবোধের ক্ষেত্রে ৮৪.৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ বাসার আশপাশে একা চলাচলকে নিরাপদ মনে করেন। তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে এ হার কম। নিজ বাসায় সন্ধ্যার পর নিরাপত্তাবোধের হার ৯২.৫৪ শতাংশ।
সুশাসন বিষয়ে জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ২৭.২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন তারা সরকারি সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারেন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে প্রভাবের ক্ষেত্রে এ হার নেমে এসেছে ২১.৯৯ শতাংশে। জাতীয়ভাবে প্রায় এক-চতুর্থাংশ নাগরিক দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্তিমূলক বলে মনে করেন।
গত এক বছরে ৪৭.১২ শতাংশ মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন এবং ৪০.৯৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের সন্তান সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় সন্তুষ্টির হার ৭২.৬৯ শতাংশ এবং প্রাথমিক শিক্ষায় ৮১.৫৬ শতাংশ।
এ ছাড়া গত দুই বছরে ১৬.১৬ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো বিরোধের সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ পেয়েছেন।
জরিপে আরও দেখা যায়, ১৯.৩১ শতাংশ নাগরিক বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। বৈষম্যের প্রধান কারণ আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও লিঙ্গ। এসব ঘটনার মাত্র ৫.৩৭ শতাংশ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।